শর্করার কাজ কি?

শর্করার কাজ কি

শর্করা কাকে বলে?

শর্করা হল একধরনের কার্বোহাইড্রেট যা প্রাণী ও উদ্ভিদের শরীরের প্রধান জ্বালানি। শরীরে শর্করার প্রধান কাজগুলো নিম্নরূপ:

১. শরীরের কোষগুলোকে জ্বালানি ও শক্তি যোগান দেয়।

২. প্রয়োজনীয় হরমোন, নিউরোট্রান্সমিটার ইত্যাদি তৈরিতে সাহায্য করে।

৩. রক্তে গ্লুকোজ পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

৪. মস্তিষ্ক ও নাড়ি ব্যবস্থাকে কাজ করতে সহায়তা করে।

৫. প্রোটিন ও চর্বির মেটাবলিজমে ভূমিকা রাখে।

৬. উদ্ভিদে সেলুলোজ, ক্লোরোফিল ইত্যাদি তৈরিতে সাহায্য করে।

শর্করা খাবার কম খেতে হয় কেন?

শর্করা খাবার কম খেতে হয় কেন
শর্করা খাবার কম খেতে হয় কেন

শর্করাযুক্ত খাবার যেমন চিনি, গুড়, মিষ্টি ইত্যাদি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কিছু কারণে শর্করা খাবার কম করা উচিত:

১. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। শর্করা কম করে এই ঝুঁকি হ্রাস করা যায়।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ করলে বেশি ক্যালোরি নেওয়ার ফলে ওজন বাড়ে। শর্করা কমালে ক্যালোরি কমে যায় এবং ওজন কমানো সহজ হয়।

৩. মৃত্যুর ঝুঁকি কমানো: শর্করার অতিরিক্ত প্রয়োগ হৃদরোগ, ক্যানসার ইত্যাদি মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। শর্করা কমালে এই ঝুঁকি কমে যায়।

৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: শর্করার অপ্রয়োজনীয় প্রয়োগ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। সুস্থ রক্তচাপের জন্য শর্করা কমানো দরকার।

৫. সারাদিন শক্তিশালী থাকা: শর্করার সাময়িক শক্তি থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী শক্তি দেয় না। শর্করা কমালে সারাদিন শক্তিশালী থাকা যায়।

সুতরাং, এই সব কারণে শর্করাযুক্ত খাবার কম করে নেওয়া উচিত। তবে শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমাণে শর্করা গ্রহণ করা দরকার। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অবলম্বন করে শর্করার পরিমাণ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

রক্তে শর্করার মাত্রা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হয়?

রক্তে শর্করার মাত্রা নিম্নলিখিত উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়:

১. ইনসুলিন হরমোন: ইনসুলিন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে সেটি কমায়। কোষকে গ্লুকোজ গ্রহণে সহায়তা করে এবং গ্লাইকোজেনেসিস মাধ্যমে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

২. পানিতে ভেজা খাদ্য: পানিতে ভেজা শাকসবজি, ফল ইত্যাদি খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৩. ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

৪. ঔষধ: ডায়াবেটিসের রোগীদের ডাক্তারি পরামর্শে ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমেও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

৫. কার্ব কমানো: আহারে কার্বোহাইড্রেট কমানোর মাধ্যমেও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

সুতরাং, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপন অবলম্বন করে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

শর্করার মাত্রা
শর্করার মাত্রা

শ্বেতসার ও শর্করার পার্থক্য নিম্নরূপ

দিক শ্বেতসার শর্করা
উৎস প্রাণি প্রত্যক্ষভাবে গ্রহণ করা যায় উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের ফলাফল
রাসায়নিক সম্পর্ক মোনোস্যাকারাইড কার্বোহাইড্রেট
উদাহরণ গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ গ্লুকোজ, স্টার্চ, সেলুলোজ
শরীরে প্রবেশ সরাসরি শোষণ হয় উদ্ভিদে থেকে লিউকোপ্লাস্টের মাধ্যমে শোষণ হয়
চিনির চেয়ে মিষ্টি চিনির চেয়ে কম মিষ্টি চিনির তুলনায় বেশি মিষ্টি

রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে জড়িত হরমোনগুলো:

হরমোন কার্য
ইনসুলিন রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়
গ্লুকাগন রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়

শরীরে শর্করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শর্করা ছাড়া শরীরের কোষগুলো কাজ করতে পারে না। শর্করা ছাড়া শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি তৈরি হয় না। তাই শর্করার ক্ষতিসাধন বা অভাব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

শর্করার দুই প্রকার রয়েছে:

১. সরল শর্করা

২. জটিল শর্করা

সরল শর্করা গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং গ্যালাক্টোজ। এই শর্করাগুলো খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। জটিল শর্করার মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোজেন, স্টার্চ। এসব জটিল শর্করা সরল শর্করা থেকে তৈরি হয়।

সরল শর্করার কাজ:

১. শরীরের কোষগুলোকে শক্তি যোগান দেয়।

২. প্রয়োজনীয় হরমোন, নিউরোট্রান্সমিটার ইত্যাদি তৈরিতে সাহায্য করে।

৩. রক্তের গ্লুকোজ পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

৪. মস্তিষ্ক ও নাড়ি ব্যবস্থাকে কাজ করতে সাহায্য করে।

জটিল শর্করার কাজ:

১. কোষগুলোকে দীর্ঘমেয়াদী শক্তি সরবরাহ করে।

২. প্রয়োজনে সরল শর্করাতে রূপান্তরিত হয়ে শক্তি যোগায়।

৩. ইনসুলিনের কাজ সহজ করে।

৪. ভিটামিন, খনিজ লবণ গ্রহণে সাহায্য করে।

শরীরে শর্করা না থাকলে কী কী সমস্যা হয়:

১. হাইপোগ্লাইসেমিয়া: রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়া।

২. দুর্বলতা, ক্লান্তি বোধ করা।

৩. মাথাব্যথা, অবসাদ, ঘুমোজাগার সমস্যা।

৪. চর্মের শুষ্কতা, চোখের ক্ষতি।

৫. দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।

৬. ওজন কমা।

৭. হাড়ের ক্ষয় হওয়া।

৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।

৯. মৃত্যুও ঘটতে পারে (যদি সময়ে চিকিৎসা না নেওয়া হয়)।

সুস্থ থাকতে শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণে শর্করা রাখা খুবই জরুরি। বিভিন্ন উৎস থেকে শর্করার পরিমাণ নিশ্চিত করা উচিত।

শর্করার উৎস

  • চিনি, গুড়, মিষ্টি, মিঠাই
  • ফল, লবণ
  • ডাল, আলু, ভাত
  • দুধ, দই, মাখন
  • পানির সঙ্গে গ্লুকোজ ভেজাল খাওয়া

শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণে শর্করা রাখলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তবে অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ এড়াতে হবে, যা বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। সুস্থ থাকতে ব্যালেন্সড ডায়েট অবলম্বন করা উচিত।

প্রতিদিন কত শর্করা খাওয়া উচিত?

স্বাভাবিক মাত্রা দিনে ৩০০ গ্রাম, প্রতিদিন কত শর্করা খাওয়া উচিত সেটির একটি সাধারণ ধারণা নিম্নরূপ:

ব্যক্তির ধরণ প্রতিদিন সুপারিশকৃত শর্করার পরিমাণ
সাধারণ বয়স্ক পুরুষ ৩০ – ৩৫ গ্রাম
সাধারণ বয়স্ক মহিলা ২৫ – ৩০ গ্রাম
কিশোর বয়সী ছেলে ৩০ – ৩৫ গ্রাম
কিশোর বয়সী মেয়ে ২৫ – ৩০ গ্রাম

মানুষ কোন শর্করা হজম করতে পারে না?

মানুষ সাধারণত সব ধরনের শর্করাই হজম করতে পারে। তবে কিছু মানুষ নির্দিষ্ট শর্করা হজম করতে অক্ষম হতে পারেন। যেমন:

ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স: এই অবস্থায় ল্যাক্টোজ শর্করা হজম করা কঠিন হয়। এর ফলে দুধ, দই, আইসক্রিম খাওয়ার সময় বিপদ হতে পারে।

ফ্রুক্টোজ ম্যালঅ্যাবসর্পশন: এতে ফ্রুক্টোজ শর্করা হজমের সমস্যা হয়। ফল, রস খাওয়া কঠিন হয়।

সাকারোজ ইনটলারেন্স: এতে টেবিল শর্করা হজমের সমস্যা দেখা দেয়।

হারিডিটারি ফ্রুক্টোজ ইনটলারেন্স: এতে ফলের শর্করা হজম সমস্যা হয়।

সাধারণ প্রশ্ন

শরীরে শর্করার কাজ কি কি?

শরীরে শর্করার কাজ হলো শরীরের কোষগুলোকে শক্তি যোগান দেয়া, প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরি করা, রক্তে গ্লুকোজ পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা এবং মস্তিষ্ক ও নাড়ি ব্যবস্থাকে কাজ করতে সহায়তা করা।

শরীরে শর্করা না থাকলে কী কী সমস্যা হয়?

শরীরে শর্করা না থাকলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, অবসাদ, ঘুমোজাগার সমস্যা, চর্মের শুষ্কতা, চোখের ক্ষতি, দৃষ্টিশক্তি ক্ষতি, ওজন কমা, হাড় ক্ষয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

শর্করার কোন কোন উৎস থেকে গ্রহণ করা যায়?

শর্করার উৎস হলো – চিনি, গুড়, মিষ্টি, মিঠাই, ফল, লবণ, ডাল, আলু, ভাত, দুধ, দই, মাখন ইত্যাদি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top